বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩২ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ এবারে হাসপাতালে রোগীর স্বজনের তিন বেলা খাবারের দায়িত্ব নিলেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। গত ৩ দিন ধরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৫শতাধিক রোগীর স্বজনের মাঝে এ খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। নোভেল করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী খাবার হোটেল, রেস্তুরা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়া রোগীর স্বজনদের মুখে খাবার তুলে দেয়ার এই ব্যাতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহন করায় মেয়রের প্রতি কৃজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মরত সকলে।
শেবাচিম হাসপাতালের পথ বিভাগের ডায়েটেশিয়ান জাকির হোসেন মোল্লা জানান, মাননিয় সিটি মেয়র সেনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রতি রোগীর সাথে একজন করে স্বজনকে তিন বেলার খাবার বিতরণের ব্যবস্থা করেছেন। গত ৩ দিন ধরে মাননিয় মেয়রের নির্দেশক্রমে খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রোগী সাথে একজন করে স্বজনের হাতে তিন বেলার খাবার সরবরাহ করছেন।
তিনি আরো বলেন, গত ২ এপ্রিল থেকে স্বজনদের মাঝে খাবার বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। স্বজনদের মাঝে খাবার বিতরনের এই কার্যক্রম চলবে করোনা ভাইরাসের আপদকালীন সময় পর্যন্ত। ২ এপ্রিল ৪৫৫ জন, ৩ এপ্রিল ৪১১ জন ও আজ ৪ এপ্রিল ৫০৩ জন রোগীর স্বজনের মাঝে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে সকালে খাবারে রোগী ও স্বজনরা পাচ্ছেন ১৪৫ গ্রাম পাউরুটি, একটি করে সিদ্ধ ডিম ও কলা।
দুপুরের খাবারের পাচ্ছেন ২০০ গ্রাম চালের ভাত, ৬০ গ্রাম মোরগের মাংস, ১৫৮ গ্রাম সবজি (আলু, চাল কুমড়া ও মিষ্টি কুমড়া, পুই শাক, লাউ, কাচা পেপে), ১০ গ্রাম মুসুরী ডাল। রাতে খাবারের পাচ্ছেন ১৯০ গ্রাম চালের ভাত, ৬০ গ্রাম মোরগের মাংস, ১৫৮ গ্রাম সবজি (আলু, চাল কুমড়া ও মিষ্টি কুমড়া, পুই শাক, লাউ, কাচা পেপে), ১০ গ্রাম মুসুরী ডাল। এছাড়া ডায়াবেটিক আক্রান্ত রোগী ও স্বজনদের জন্য ভিন্ন খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
সূত্র মতে, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে পেইং বেড কিংবা পেইং কেবিন ব্যথিত রোগীরা বিনা মূল্যে তিন বেলা খাবার পেয়ে থাকেন। রোগীদের সাথে থাকা সহযোগীরা (স্বজন) বাহির থেকে (খাবার হোটেল/রেস্তুরা) খাবার কিনে খেয়ে থাকেন।
বর্তমানে নোভেল করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আশেপাশের খাবার হোটেল ও রেস্তুরা বন্ধ থাকায় স্বজনরা তাদের খাবার সংগ্রহ করতে পারছে না। বাইরে খাবার হোটেল বন্ধ এবং চলাফেরা সীমিত হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। অনেককেই অনাহারে থেকে রোগীর সেবা করতে হচ্ছে। যা খুবই অমানবিক। এ অবস্থায় সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে শতশত রোগীর স্বজনদের মুখে খাবার তুলে দেয়ার উদ্যোগটি ব্যাতিক্রমী।
হাসপাতালের অর্থপেডিক্স বিভাগে চিকিৎসাধীন রোগী তোয়াজ্জেল হোসেন। তিনি মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার পূর্বষাট্রি গ্রামের বাসিন্দা। তার ডান পা ভেঙ্গে যাওয়ায় আমি এখানে গত ৩১ মার্চ ভর্তি হই। ১৮ বছর বয়সী কলেজ পড়–য়া মেয়ে সানজিনা আক্তার তার দেখাশুনা করেল। তিনি এখানে ভর্তিপর পর দুই দিন কোন খাবার হোটেল খোলা না পেয়ে হাসপাতাল থেকে পাওয়া একজনের ( রোগীর) খাবার তারা (বাবা-মেয়ে) দুইজন ভাগ করে খেয়েছে। পরে ২ এপ্রিল থেকে সিটি মেয়রের সহযোগীতায় সানজিদাও খাবার পাচ্ছে। রোগী তোয়াজ্জেল হোসেন বলেন, আসরা ওনার (সিটি মেয়র) এলাকার ভোটার না, হের পর ওনি আমার মাইয়ার খাওন দিছে। এর জন্য হের প্রতি আমার প্রতি কৃতজ্ঞ।
মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা অটল টেলি জানান, আমার স্ত্রী চম্পা রানী আমার সাথে হাসপাতালে থাকেন। বাহিরের খাবার হোটেল বন্ধ থাকায় তিনি একদিন না খেয়ে ছিলেন। এখন আর তাকে না খেয়ে থাকতে হয় না। শুনছি বরিশালের সিটি মেয়র রোগীর সাথে থাকা একজনকে খাবার দিচ্ছে।
একই ভাবে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের রামপুর গ্রাম থেকে আসা হাসপাতালের সার্জারী বিভাগে চিকিৎসাধীন রোগী আঃ সালাম’র ছেলে সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার বাবাকে এখানে ভর্তি করেছি। তাকে দেখার জন্য আমি এখানে আছি। বাবার সাথে আমিও তিন বেলা খাবার পাচ্ছি। দেশের এমন অবস্থায় তিন বেলা হোটেলে খাবার ব্যবস্থা না থাকায় আমি প্রথমত বিপদে পরেছিলাম। এখন বরিশালের সিটি মেয়র আমার তিন বেলার খাবার দেয়ায় আমি খুশি ও তাকে ধন্যবাদ জানাই।
শেবাচিম হাসপাতালের আন্তঃবিভাগ চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডাঃ সুদীপ কুমার হালদার জানান, নোভেল করোনা ভাইরাসের আপদকালীন সময় রোগীদের সাথে থাকা স্বজনদের মুখে খাবার তুলে দেয়ার উদ্যোগটি সিটি মেয়রের একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। আমিসহ আমাদের ইনডোরের চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে তার প্রতি কৃজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
সেই সাথে মাননিয় মেয়র মহাদয়ের কাছে করোনা ওয়ার্ডের রোগীদের সেবাদানকারী চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের জন্য আলাদা থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
শেবাচিম হাসপাতালের আউটডোর ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডাঃ সৌরভ সুতার সিটি মেয়রের প্রতি কৃজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এই সময়ে রোগীর সাথে থাকা স্বজনদের মুখে খাবারের ব্যবস্থা করা একটি মহৎ উদ্যোগ। আমাদের সিটি মেয়র মহাদয় এমন উদ্যোগটি গ্রহন করে আবারও প্রমাণ করলো তিনি সর্বজনপ্রিয় ব্যক্তি।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি ডাঃ মোঃ ইসতিয়াক হোসেন বলেন, এটি একটি ব্যাতিক্রমী উদ্যোগ। এই উদ্যেগটি সতিকারার্থে প্রশংসনিয়। সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল¬াহ মহাদয়ের প্রতি আমিসহ আমাদের চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সকলের পক্ষ থেকে কৃজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সেই সাথে দেশের এই অবস্থায় গরীব দুঃস্থদের পাশে দাড়ানোর জন্য সমাজের বৃত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন জানান, হাসপাতালের সর্বপ্রকার ভালকাজে আমার আমাদের মেয়র মহাদয়কে পাই। সরকার রোগীদের তিন বেলার খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। আর আমারে মেয়র মহাদয় রোগীদের সাথে থাকা একজনকরে স্বজনের খাবারের ব্যবস্থা করে আমাদের উপকৃত করেছেন। আমারা তার প্রতি কৃজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
Leave a Reply